শহীদনূর আহমেদ::
অনুচ্ছেদের প্রারম্ভে সুখবর দিয়ে শুরু করি। হাওরের জনপদ সুনামগঞ্জের একটি পত্রিকার সাপ্তাহিক আর দৈনিক মিলে দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। ভাবা যায়, তুলনামূলক অনুন্নত মফস্বল শহরের একটি কাগজ সাপ্তাহিক হিসেবে দীর্ঘ ১৪ বছর বিরামহীন পথ অতিক্রম করে দৈনিকের ১১ বছরে পা দিয়েছে। দৈনিক সুনামকণ্ঠের এই পথচলা এতো সহজ ছিলনা। এর পেছনের গল্প অনেকটাই ত্যাগ আর তিতিক্ষার। অদম্য সাহসিকতা, ইচ্ছাশক্তি ও ধীরচেতা মনোভাবের ফলেই এতোদূর আশা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে যাঁকে অভিনন্দন জানাতে হয় তিনি হচ্ছেন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায়। যাঁর দুঃসাহসিকতায় আজ সক্রিয় অবস্থানে সুনামকণ্ঠ। একজন শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে গত ১৩ বছর একেবারে কাছ থেকে দেখেছি পত্রিকাটির আদ্যোপান্ত। একটি পত্রিকার টিকিয়ে রাখার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিজ্ঞাপন বা অর্থের সংস্থান। সুনামগঞ্জের মতো একটি জেলায় যা অপ্রতুল। অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানে বিনাস্বার্থে অর্থের যোগান দিয়েছেন পত্রিকাটির সম্পাদকম-লীর সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হক। বলা যায়, সুনামকণ্ঠের এই পথচলায় তিনি রয়েছেন প্রাণভ্রমরা হিসেবে। এমন অসাধারণ একটি কাজ সম্পাদনের জন্য তাঁর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এবার মনোযোগ দেই লেখাটির শিরোনামে। সাপ্তাহিক, দৈনিক, প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক মিলে আমার সাংবাদিকতা ১৩ বছরে পা দিয়েছে। কলেজ জীবনে সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠের মাধ্যমে এ পেশায় পথচলা শুরু। স্কুলপড়–য়া অবস্থায় একদিন ক্লাসে স্যার আমার জীবনের লক্ষ্য জানতে চেয়েছিলেন। সেদিন উত্তরে বলেছিলাম কবি ও সাংবাদিক। কাকতালীয় হলেও পেশাগত জীবনে স্কুলজীবনের লক্ষ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। আমার কাছে সংবাদ ও সাংবাদিক দুইটি পবিত্র নাম। তীব্র প্রেরণা নিয়ে এই পেশায় মনোনিবেশ করা। দীর্ঘ এই পথচলায় অনেক গণমাধ্যমে কাজ করেছি। সময়ের পরিক্রমায় কাজের ক্ষেত্র ও ধরণ পাল্টেছে। আমার শুরুটা ছিল এনালগ যুগে। তখন ইন্টারনেটের অবাধ বিচরণ ছিলনা। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা করতেন জেলা শহর ও মফস্বলে কর্মরত সাংবাদিকগণ। সংবাদপত্র ও ইলেক্টনিক মিডিয়া অনুযায়ী সীমিত সাংবাদিক ছিলেন। নির্দিষ্ট গণমাধ্যমে প্রতিনিধিরাই সাংবাদিকতা করতে পারতেন। তখনকার সময়ের সাংবাদিকতা কদর ছিল সমাদৃত। আমার স্পষ্ট মনে আছে ২০১২ সালের দিকে রঙ্গারচর ইউনিয়নের হরিণাপাটি স্কুলে সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলাম। ডিজিটাল ক্যামেরা হাতে দেখে কতজন যে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি তো সাংবাদিক। এক যুগ আগের এই মুহূর্তটা আমাকে এখনোও ভাবিয়ে তুলে। গ্রামবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সমাদর ভুলার নয়। বিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে সাপ্তাহকি পত্রিকায় ছাপা হয় প্রতিবেদন। একটি নিউজের রেশ থাকতো সপ্তাহব্যাপী। যাঁরা জাতীয় দৈনিক বা টেলিভিশনে কাজ করতেন তাদের একেকটা সংবাদ তৎকালীন সময়ে পাঠকমহলে সাড়া ফেলতো। অফিস, আদালত, শহর-বন্দর গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গাতে সাংবাদিকদের গ্রহণযোগ্যতা ছিলো। বর্তমান ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির যুগে সাংবাদিকের উর্বর চাষাবাদ চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় এখন সাংবাদিকতার ‘বাম্পার ফলন’ হয়েছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি অসংখ্য অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেইজে কর্মরত রয়েছেন অসংখ্য সাংবাদিক। যারা ফেসবুক কিংবা ইউটিউব, টিকটকে কনটেন্ট তৈরি করছেন তাদের একটা অংশও আজকাল সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকেন। সাংবাদিকতা এখন সহজলভ্য বিষয়। কয়েক হাজার টাকায় একটি পোর্টাল তৈরি করে অথবা একটি ফেইসবুক পেইজ একাউন্টে দুইলাইন লিখা ও ভিডিও প্রচার করতে পারলেই সাংবাদিক হয়ে উঠছেন কেউ কেউ। একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল মানেই একজন সাংবাদিক, একাধিক গণমাধ্যমের মালিক। ফলে সংবাদ ও সাংবাদিকের ভাবমূর্তি দিন দিন ম্লান হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সাধারণের কাছে সাংবাদিকতার বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। কোনটি সংবাদ, কোনটি সংবাদ নয়; এটি নিয়ে জনমনে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। ‘মোবাইল সাংবাদিকতা’র নামে অপসাংবাদিকতার তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে গুজব কিংবা ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার অন্যতম ক্ষেত্র হলো মোবাইল সাংবাদিকতা। ভিউ অর্জনের নামে তথ্যের যাচ্ছেতাই ব্যবহারে মূলধারার গণমাধ্যমেও এর প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই মূলধারার গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনদের সতর্ক থাকতে হবে। এখনই এর লাগাম ধরতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে এই পেশা অতল গহ্বরে পতিত হবে বলে মনে করছি। এবার ভূমিকার দিকে যাওয়া যাক। দৈনিক সুনামকণ্ঠের মতো অগণিত পত্রিকা রয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠান হাতেকলমে সাংবাদিকতার শিক্ষা দেয়া হয়। মাঠপর্যায়ে চর্চার মাধ্যমে একজন শিক্ষানবিশ গণমাধ্যমকর্মী হয়ে উঠেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তৈরির আস্থার প্রতীক। যাঁরা কাগজের পাতায় তুলে ধরেন গ্রামবাংলার সমস্যা, সম্ভাবনা ও উন্নয়ন চিত্র। সাংবাদিকতার ক্রান্তিলগ্নে এটি আশা জাগানিয়া। [লেখক-সাংবাদিক ও নাট্যকার]
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
সাংবাদিকতার ‘বাম্পার ফলনে’ সংবাদের উৎপাদন ব্যাহত
- আপলোড সময় : ০১-০১-২০২৫ ১২:৫৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০১-০১-২০২৫ ০১:২৭:১৩ পূর্বাহ্ন
ছবি: শহীদনূর আহমদ, স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকন্ঠ।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ